আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যকে সেবা

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ৩ | | NCTB BOOK
2
2

উপহার ৩৯-৪০

আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যকে সেবা

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানাও। শিক্ষক একটি গান এবং প্রার্থনা দিয়ে শুরু করবেন।

বরষ আশিষ বারি (আজি) 

অবিরত ধারে যীশু সবার উপরি।

১. কি উপহার দিব আজি, গুণধাম, 

এই এনেছি ভগ্ন চিত্ত হল পাপহারি।

২. জ্বাল প্রেম-অগ্নি সকল হৃদয়ে, 

সবে পরসেবা তরে যেন প্রাণ দিতে পারি 

৩. তব বলে কর সবে বলবান, 

মোরা জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি। 

৪. পূর্ণ কর সবে পবিত্র আত্মায়, 

যেন জগতেরে তব প্রেমে মাতাইতে পারি।

 খ্রীষ্ট সংগীত ১৫৪

 

এ সেশন দুটিতে শিক্ষক তোমাদের এবার আরও গভীরভাবে সমাজের কল্যাণে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা করার মনোভাবের উপর পবিত্র বাইবেল থেকে এবং একজন ঐতিহাসিক মহান ত্যাগী মিশনারির বিষয়ে আলোচনা করবেন। তার জীবনের গল্পের মাধ্যমে তোমরা খুঁজে পাবে কীভাবে নিজের জীবনের সুখ ও বিলাসিতাকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বসবাস করে সেবাদান করেছেন।

 

পবিত্র বাইবেল পাঠ

 

শিক্ষক তোমাদের মধ্যে একজনকে পবিত্র বাইবেল থেকে ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পড়তে বলবেন।

প্রেরিত পৌলের কষ্টভোগ ও ত্যাগ

২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ

 

আমি আবার বলি, কেউ যেন আমাকে বোকা মনে না করে। অবশ্য যদি তোমরা তা-ই মনে করে থাক তবে বোকা হিসাবেই আমাকে গ্রহণ কর, যেন আমি একটুখানি গর্ব করতে পারি। আমি এখন যা বলছি তা প্রভুর আদেশ মত বলছি না, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে গর্ব করতে গিয়ে বোকার মতই বলছি। মানুষ যা নিয়ে গর্ব করে, অনেকেই যখন তা নিয়ে গর্ব করছে তখন আমিও করব না কেন? তোমরা জ্ঞানী বলে খুশী হয়ে বোকাদের সহ্য কর। শুধু তা-ই নয়, যদি কেউ তোমাদের দাস বানায়, তোমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, তোমাদের ফাঁদে ফেলে, তোমাদের মনিব হয়ে দাঁড়ায় কিম্বা তোমাদের গালে চড় মারে, তোমরা সেই সবও সহ্য কর। আমি লজ্জার সংগে স্বীকার করছি যে, এই সব ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি দুর্বল ছিলাম।

যা নিয়ে অন্যেরা গর্ব করতে সাহস করে আমিও তা নিয়ে গর্ব করতে সাহস করি; এই কথা আমি বোকার মতই বলছি। যারা গর্ব করে তারা কি ইব্রীয়? আমিও তা-ই। তারা কি ইস্রায়েলীয়? আমিও তা-ই। তারা কি অব্রাহামের বংশধর? আমিও তা-ই। তারা কি খ্রীষ্টের সেবাকারী? আমি আরও বেশি করে তা-ই। মনে রেখো, আমি মাথা- খারাপ লোকের মত কথা বলছি। খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি তাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি, আরও অনেক বার জেল খেটেছি, আরও অনেক বার মার খেয়েছি, অনেক বার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। যিহুদীদের হাতে পাঁচ বার আমি উনচল্লিশ ঘা চাবুক খেয়েছি, বেত দিয়ে তিন বার আমাকে মারা হয়েছে। এক বার আমাকে পাথর মারা হয়েছিল। তিন বার আমার জাহাজ-ডুবি হয়েছিল। একদিন ও একরাত আমি সমুদ্রের জলের মধ্যে ছিলাম। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। বন্যা, ডাকাত, নিজের জাতির লোক এবং অযিহুদীদের দরুণ আমি বিপদে পড়েছি। তা ছাড়া শহরে, মরু-এলাকায়, সমুদ্রে এবং ভণ্ড ভাইদের মধ্যেও আমি বিপদে পড়েছি।

খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি কষ্টের মধ্যেও কঠিন পরিশ্রম করেছি। আমি অনেক রাত জেগেছি, খিদে ও পিপাসায় কষ্ট পেয়েছি, না খেয়ে থেকেছি, ঠান্ডায় ও কাপড়-চোপড়ের অভাবে কষ্ট পেয়েছি। বাইরের এই সব ব্যাপার ছাড়াও সব মণ্ডলীগুলোর জন্য রোজই আমার উপর চিন্তার চাপ পড়ছে। কেউ দুর্বল হলে আমি কি তার দুর্বলতার ভাগী হই না? কারও দরুন কেউ পাপে পড়লে আমি কি অন্তরে জ্বালা বোধ করি না?

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

 

প্রেরিত পৌল একজন সাহসী প্রচারক, যিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুও গ্রহণ করতে সব সময় প্রস্তুত থাকতেন। তিনি যদিও এক সময় শিক্ষিত ফরিসী ছিলেন এবং তার বাবা একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন তারপরও যীশুখ্রীষ্টের জন্য তিনি তার ধনসম্পদ ছেড়ে সুসমাচার প্রচার করার জন্য সমস্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। আমরা ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পেড়েছি, যেখানে পৌল তার কষ্টভোগের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এই দুঃখভোগ সহ্য করেছেন শুধু মানুষকে মুক্তির পথ দেখাবার জন্য। প্রেরিত পৌল তার জীবনের সমস্ত আনন্দ ও সুখভোগ ত্যাগ করে শুধু যীশুখ্রীষ্টের কথা প্রচার করার জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কষ্টভোগ করেছেন। তিনি চার্চগুলোর জন্য চিন্তা করতেন এবং যখন কেউ কষ্টে জীবন যাপন করতো তিনিও তখন কষ্ট পেতেন। আমাদের জীবনে যখন আমরা অন্যের কষ্ট দেখি তখন তাদের জন্য আমাদেরও দুঃখভোগ করা উচিত। তাদের কষ্টের সঙ্গে এক হয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার। এই সময় একজন মহীয়সী নারীর জীবনী আলোচনা করব যিনি নিজের আরাম- আয়েশ ত্যাগ করে মানুষের সেবা করে গেছেন।

 

জন্ম ও আহ্বান

 

মিস এলেন আর্নল্ড ৫ জুলাই ১৮৫৮ সালে এস্টন, ওয়ারউইকশ্যায়ার, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলফ্রেড আর্নল্ড একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা জেইন সপরিবারে ১৮৭৯ সালে অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হন। মিস আর্নল্ড, ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট ব্যাপ্টিস্ট চার্চে ১১ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন। সেই চার্চের পালক রেভা, সাইলাস মিড-এর অনুপ্রেরণায় তিনি প্রথম মানবসেবা কাজের জন্য উৎসাহিত হন। তিনি মেডিকেল ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং অ্যাডিলেড হাসপাতালের দুইজন নার্সকে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, কলেরা এবং গুটিবসন্ত রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেন। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে তার বান্ধবী ম্যারি গিলবার্টসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন। কলকাতা ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির ভাষা স্কুলে বাংলা ভাষা শিখেন। এরপর মিস আর্নল্ড ও মিস গিলবার্ট প্রথম ফরিদপুরে আসেন, কিন্তু তার পূর্ববঙ্গের আবহাওয়া সহ্য হচ্ছিল না বিধায় তিনি ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যান। ১৮৮৫ সালে তার সঙ্গে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে তিনি পুনরায় পূর্ববাংলায় ফিরে আসেন।

 

ত্যাগ ও সেবার মহিমা

 

মিস এলেন আর্ণল্ড ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রথম সেবা কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির পক্ষে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ত্রিপুরার মহারাজার কাছ থেকে একটি জমি কিনে সেখানে একটি ইটের দালানের মিশন হাউস তৈরি করেন। একজন নারী বিদেশিনী হয়ে বার্জে করে, কয়লা আনিয়ে সেই জ্বালানি দিয়ে ইটের ভাটায় ইট পুড়িয়ে দালান তৈরি করেন। তিনি ১৮৯১-৯২ খ্রীষ্টাব্দে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিতে ছিলেন তখন দালানের কাজ শেষ হয় কিন্তু সেই বাড়িতে তিনি ফিরে আসতে পারেননি। ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সরাসরি পাবনাতে আসেন এবং নারীদের মধ্যে শিক্ষা চিকিৎসা ও প্রচার কাজ শুরু করেন। পাবনায় মিশনারিদের কোনো থাকার ঘর ছিল না। মিস আর্ণল্ড একটি ভাড়া বাসায় থেকে স্বাস্থ্য সেবা দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি তার বন্ধুদের কাছে অর্থের জন্য চিঠি লিখতে থাকলেন যাতে পাবনাতে একটি মিশন হাউস তৈরি করতে পারেন। তার প্রার্থনা ও অক্লান্ত চেষ্টায় তিনি মিশন হাউস তৈরির টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন এবং ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে একটি মিশন বাড়ি তৈরি করেন যেটি জেনানা হাউস নামে পরিচিত (প্রকৃত নাম John Price House)। ঐ বাড়িটিতে তিনি দুঃস্থ মহিলাদের জন্য আশ্রম তৈরি করেছিলেন। মিস আর্ণল্ডের সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবায় যোগ দিয়েছিল ডা. চার্লস হোপ এবং তার স্ত্রী ডা. লারা হোপ। ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে তিনি পাবনার দাশুরিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণ এবং কুচলিয়া বিলের কৃষকদের বীজ দিয়ে সাহায্য করেছেন। কুচলিয়াতে একটি মিশন স্টেশন করে সেখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি বালক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

 

এই পরিশ্রমী আর্তমানবতার সেবায় রত কুমারী বিদেশিনী ভীষণভাবে চেয়েছিলেন পাবনার জেনানা হউস থেকে স্বাস্থ্যসেবা করে যাবেন। পরবর্তীকালে তাকে নিজের প্রচেষ্টায় অর্থ সংগ্রহ করে বাড়ি করা জেনানা হাউসে থাকতে দেওয়া হয়নি। তার একটি বড় কারণ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি তাকে পেনশন গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল এবং মিশন হাউস ছেড়ে অন্য স্থানে যেতে আদেশ করেছিল। সেই দিন তিনি একা মিশন হাউস থেকে চোখের জলে বের হয়ে যান এবং একটি খোলা গরুর গাড়িতে চড়ে ১২ মাইল পথ অতিক্রম করে আভাইকোলা মিশন স্টেশনে চলে আসেন। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে মিস আর্নল্ড আতাইকুলা এবং বেড়া এই দুই স্থানে সেবাকাজ শুরু করেছিলেন। এই দুই অঞ্চল জলাশয় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও শুকনো মৌসুমে কলেরার প্রাদুর্ভাব প্রচণ্ড ছিল। তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। পরবর্তীকালে আতাইকুলাতে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই কেন্দ্র থেকে তিনি প্রতিদিন বিনামূল্যে রোগী দেখতেন এবং নামমাত্র মূল্যে ঔষধ দিতেন। মিস আর্ণল্ড কয়েক রকম ওষুধের মিক্সার গরম পানিতে ফুটিয়ে কাচের শিশিতে ভরে রাখতেন। অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর ছিলো বলে ওষুধের নাম পড়তে পারতো না। তাই তিনি কয়েকটি ওষুধের সংমিশ্রণে তরল ওষুধ শিশিতে করে রোগীদের দিতেন যাতে তারা সঠিক চিকিৎসা পায়।

মিস আর্ণল্ড নামে তার অমতে একটি ইনসিওরেন্স করা হয়। তিনি ১৯২৮ সালে তার চিঠিতে লিখেছিলেন, "আমি কখনো আমার জীবনের বীমা করিনি এবং কখনো আমার বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয় করিনি, তাই আমার স্বর্গের পিতা ছাড়া আর কোনো কিছু চাওয়ার নাই।" তিনি ইনসিওরেন্স গ্রহণ করেননি। তার চিকিৎসা সেবার কথা শুনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর কৌতূহলী হয়ে আতাইকুলা পরিদর্শনে আসেন। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদক 'কাইজার-ই-হিন্দ' পদকে ভূষিত হন। কিন্তু তিনি নম্রতায় ঐ পদক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি যীশুখ্রীষ্টের বাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, "আমি সেবা পেতে আসি নাই কিন্তু সেবা দিতে এসেছি।"

 

মৃত্যু

 

১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে শেষবারের মতো মিস আর্নল্ড ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়াতে যান। অথচ তার মন পড়ে ছিলো বাংলার হতদরিদ্র মানুষের জন্য, বারবার তাদের ম্লান, ক্ষুধার্ত, অসুস্থ চেহারা মনে পড়ত। তিনি দুঃস্থ মানুষদের কষ্টে ব্যথিত হয়ে আবার ফিরে যেতে চাইলেন আতাইকুলাতে, কিন্তু মিশন বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা দেখে কোনোভাবে পাঠাতে রাজি হয়নি। অবশেষে সবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে পাবনার আতাইকুলাতে ফিরে আসেন। বার্ধক্য ও অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। তিনি আতাইকুলাতে আর দালান করেননি, একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন। এক মরণ রোগ তাকে পেয়ে বসেছিল। মিশন বোর্ড তার চিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, "মিশন হাউস যেন আমাকে না নেয়, আমি এই গ্রামেই থাকতে চাই যতদিন না আমার প্রভু আমাকে তাঁর কাছে তুলে নেন।" ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের ৯ই জুলাই এই মহীয়সী নারী আতাইকুলাতে তাঁর কুঁড়েঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইছামতি নদীর তীরে ঢাকা পাবনা হাইওয়ের পাশে তিনি খ্রীষ্টানদের জন্য একটি কবরস্থান তৈরি করেছিলেন। সেখানে তাকে সমাধি দেওয়া হয় যা এখনও তার সাক্ষ্য বহন করে।

এই পরিশ্রমী মহীয়সী নারী সমস্ত সুখ ত্যাগ করে নিজের দেশ ছেড়ে একটি কুটিরে এসে বসবাস করেছেন। নিজের জন্য সমস্ত সম্মান, সুবিধা ও উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঝড়, বৃষ্টি, রোদের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে, গরুর গাড়িতে করে এবং নৌকায় করে চিকিৎসা সেবা দিতেন। অনেকবার তিনি বর্ষাকালে বিলের মধ্যে ঝড়- বৃষ্টিতে পড়েছিলেন। প্রেরিত পৌল যেমন তার সাক্ষ্যে খ্রীষ্টের জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করে নিপীড়ন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যে ভুগেছেন, অসুস্থতা, ঝড়, নৌকাডুবিতে পড়েছেন (২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ), মিস আর্নল্ড তেমনি প্রেরিত পৌলের মতো কষ্টের জীবন যাপন করে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: ড. ডেনিশ দিলিপ দত্ত, আশীর্বাদের ঝর্ণাধারায়, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ, ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ৩৯-৪৫, ৪৭

 

 

এসো একক কাজ করি

 

 

 

মানচিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা

 

তোমরা একটা সাদা কাগজে নিচে ছাপানো বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে অঙ্কন করবে। এরপর ঐ মানচিত্রে মিস এলেন আর্নল্ড যে এলাকা (উপজেলা) ও জেলা থেকে তার সেবাকাজ শুরু করেছে, সেই স্থানগুলো সনাক্ত করতে হবে এবং তার মিশনারি যাত্রার রোডম্যাপ অঙ্কন করতে হবে। রোডম্যাপ তৈরি করার পর যে সমস্ত এলাকায় তিনি তার ত্যাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার কাজ করেছেন সেই স্থানসমূহ তীর চিহ্ন দিয়ে সনাক্ত করো এবং কাগজের ডান পাশে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

নিচের মানচিত্রের ছবি দেখে অঙ্কন করো।

 

পরবর্তী সেশনে তোমরা বাইবেল থেকে আরও একটি ত্যাগের মাধ্যমে সেবার ব্যাখ্যা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী সম্পর্কে জানবে।

শিক্ষক হয়তো শেষে তোমাকে প্রার্থনা করতে বলতে পারেন বা নিজে করবেন। সেশন শেষে শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় জানাও।

Content added || updated By
Promotion